Ek Dozen Kishor Golpo by Sumana Saha
“বড়রা সবসময় ছোটদের খালি বলতে থাকে, এটা খেও না, ওটা করো না, ওখানে যেও না খবদ্দার, ওতে হাত দিও না মোট্টে... শুধু না, না, আর না। যেগুলো ছোটদের ভাল্লাগে, সেগুলোতেই না! আর যত রাজ্যের তেতো খা, রঙ ফরসা হবে। ডাঁটা চিবিয়ে খা, দাঁত শক্ত হবে। মোবাইল ঘাঁটিস না, চোখ খারাপ হবে। কেন? চকলেট খেলেই কি দাঁতে পোকা হবে? কার্টুন দেখলেই কি খালি চোখ নষ্ট হবে? ছোটদের আর বড়দের ঝগড়ার আর শেষ নেই। তবে কোনো এক জায়গায় তো দুই পক্ষকে মিলতেই হবে! সেই জায়গাটা গল্প শোনার। গল্প ছোট-বড় সকলের প্রাণের জিনিস। তাই গল্প দিয়েই ছোটদের মন ভোলাতে হবে, মন ভালোও করতে হবে, সত্যিকারের ভালো। জানো, আমরা ছোটবেলায় দুধ খেতে চাইতাম না। মা দুধের মধ্যে নিউট্রামুল পাউডার গুলে দিত, চকলেটের গন্ধে ভালোবেসে ঢকঢক করে খেয়ে ফেলতাম। তোমাদের গল্পেও কেউ কেউ সেভাবে দুধের ভিতরে চকলেট ফ্লেভারের মতো সদুপদেশ মিশিয়ে দেয়, চায় যে, ছোটদের নরম মনে আঁকা হয়ে যাক সেই ভালোর ছাপটুকু। আবার অনেকসময় বাড়ির ঠাকুমা দাদুরা যেমন ছোটদের হাতে লুকিয়ে লুকিয়ে হজমি-গুলি খাওয়ায় কিম্বা ঘুড়ি কেনবার পয়সা দিয়ে বলে, মাকে বলিসনি যেন? তেমন করে কেউ কেউ তোমাদের জন্য শুদ্ধ মজার গল্প লেখেন। তোমাদের তো ভালো লেগে যায় অনেককিছু… পাখি, বেড়াল, সন্দেশ, হজমি-গুলি, খেলনা, ঘোড়ায় চড়া রাজপুত্তুর, আবার বিজ্ঞানের নানা আবিষ্কার, ভিনগ্রহের গল্প আবার ফ্যানটমের মতো কাল্পনিক বীরপুরুষের গল্পও। তোমাদের গল্পের এমন কোনো ধরাবাঁধা বিষয় নেই যে লোকে বুকে হাত দিয়ে জোর দিয়ে বলতে পারে, এটা ছোটদের ভালো লাগবেই। আমি তো তোমাদের জন্য ভালো গল্প লিখব কিনা, এসব ভেবেচিন্তে মোটেই লিখিনি। তবে বরাবর দেখে এসেছি, ছোটদের সঙ্গে ছোট হয়ে মিশে যেতে পারি। ছোটরা আমাকে বেজায় পছন্দ করে। বাড়িতে বিয়ে বা কোনো অনুষ্ঠান হলেই আমার দায়িত্ব পড়ত সব ছোটদেরকে গল্প শুনিয়ে শান্ত রাখার। এক সময় ছোটদের ভ্যালু-এডুকেশনের ক্লাসও নিয়েছি। ছোটদের শোনাতাম আমাদের দেশের মহাকাব্য রামায়ণ, মহাভারতের গল্প আর নানা দেশের গল্প। এখানে আমি তোমাদের বলব বলে নানা পত্রিকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন সময়ে লেখা কয়েকটি গল্প নিয়ে এসেছি। এতে চকলেট ফ্লেভার দুধও আছে, ডাঁটা চচ্চড়িও আছে আবার বিশুদ্ধ হজমিগুলিও পাবে তোমরা। নাও। সব তোমাদের জন্য। পড়ো অভি, ঋজু, টোটন, বুলি-বিলুর কাণ্ডকারখানা।”