Kabitirtha Sripath Srikhanda by Swapan Kumar Thakur
ক্ষিতি নব খণ্ড মাঝে খণ্ড মহাস্থান।
সর্বত্র সৌরভ যার মলয়জ সমান।।শ্রীপাট শ্রীখণ্ড গ্রাম শুধু বৈষ্ণব শাক্ত শৈব বা লোকধর্মের মহাপীঠস্থান নয়; বাংলার অন্যতম প্রধান সারস্বত ভূমি বা কবিতীর্থ। মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত শ্রীখণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে দুই শত পঁচাশি জন পদকর্তা, বৈষ্ণব সাধকের নাম। ব্রজবুলি ভাষার আদি কবি যশোরাজখান এবং এই ভাষার শ্রেষ্ঠ কবি গোবিন্দদাস কবিরাজ শ্রীখণ্ডের ভূমিপুত্র। বাংলাভাষায় দ্বিতীয় কৃষ্ণমঙ্গল পাঞ্চালিকা কাব্য রচিত হয়েছে শ্রীখণ্ডে। চৈতন্যসমকালীন শ্রেষ্ঠ বৈষ্ণব পদকর্তা নরহরি সরকারের জন্মস্থান শ্রীখণ্ড। বাংলাভাষার প্রথম বৈষ্ণব পদাবলী সংকলন শ্রীখণ্ড থেকেই রচিত হয়েছে। প্রাকচৈতন্যযুগের দুটি কৃষ্ণবিগ্রহসহ ষোড়শ শতকের শ্রীগৌরাঙ্গের গৌরনাগর দারুমূর্তি এই গ্রামেই আজও পূজিত হচ্ছে। মনোহরশাহী কীর্তনগানের উদ্ভব শ্রীখণ্ড থেকেই। শ্রীখণ্ডের মহাকবি দামোদর সেন পূজিত দশভূজা দুর্গা পূজিত হয়ে আসছে সেই পঞ্চদশ শতক থেকে। গ্রাম্যদেবী খণ্ডেশ্বরী নিজেই এক স্বতন্ত্র ইতিহাস। রয়েছে পাঁচটি পঞ্চমুণ্ডির আসন, প্রাচীন গাছকালীর পুজো। আবার শ্রীখণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে আছে রুকনুদ্দিন বারবাক শাহ, হোসেন শাহ প্রমুখ গৌড়েশ্বরে নাম। জড়িয়ে আছে পাঠান মোগলের ইতিহাস। শ্রীখণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে আছে রাজা রাজবল্লভ, বর্ধমানের জাল প্রতাপচাঁদের ইতিহাস। শ্রীখণ্ডে এখনও রয়েছে মধ্যযুগীয় পুঁথির বিপুল সম্ভার, একাধিক শিলালিপি। এসব নিয়েই কচি পাতা থেকে প্রকাশিত হতে চলেছে ড. স্বপনকুমার ঠাকুরের পরিশ্রমী লেখা “কবিতীর্থ শ্রীপাট শ্রীখণ্ড”। ধারাবাহিক ইতিহাস ও সংস্কৃতির তথ্যনিষ্ঠ আকর গ্রন্থ যা বাংলার ইতিহাস ও সংস্কৃতি চর্চার এক অপরিহার্য দলিল নিঃসন্দেহে।